বিজ্ঞানের প্রতি ছত্রে আমি স্রষ্টাকে দেখি!


"..........পৃথিবী ঘুরে, না সূর্য ঘুরে; নাকি বিজ্ঞানীর মাথা ঘুরে???"
কথাটা বহু পুরোনো কিন্তু একসময় খুব জনপ্রিয় উক্তি ছিল এটি; যখন বিজ্ঞান এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একেক সময় একেক তথ্য আমদানী করত একবার বলত, পৃথিবী ঘুরে, আবার বলত, সূর্য ঘুরে; পরক্ষণেই মত পাল্টে বলত, না পৃথিবীই ঘুরে সেই থেকে সাধারণ্যের মাথায় ঢুকল, তাহলে বোধহয় বিজ্ঞানীর মাথাটাই ঘুরে!!

গ্যলিলিওয়ের দূরবীনে চোখ রেখে আর এ্যডউইন হাবলের টেলিস্কোপের যান্ত্রিক ক্যমেরায় আমরা সৌরজগত দেখি, দেখি আমাদের গোলগাল ছোট্ট পৃথিবী তাই খুব সহজেই বলে দেই, সূর্য পৃথিবী দু'টোই ঘুরে! কিন্তু আজ থেকে দু'হাজার বছর আগে, মানুষ যখন সবেমাত্র সভ্যতার আবরণে নিজেদের আচ্ছাদন ঢাকতে শিখেছিল সে সময় এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ ছিল না খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে উপরে তাকালে যা দেখা যেত তা দিয়েই মানুষ তৈরি করত বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের থিওরী তাই সে সময় বিজ্ঞান ভুল করত কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভুলটাকেই সত্য জ্ঞান করত যেমন, বর্তমানেও অনেক বিজ্ঞানী ভুল করে ভুলে ভুল থিউরী দিয়ে থাকে কিন্তু তারা ভুলটাকেই সত্য জ্ঞান করে অতীতের বিজ্ঞানীদের ভুল যেমন নিজেরা বুঝতে পারে নি, বর্তমানের বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছে, তেমনি বর্তমানের বিজ্ঞানীদের ভুলগুলোও wb‡Riv বুঝতে পারছে না, ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা ঠিকই বুঝতে পারবে তাহলে কি বিজ্ঞান পুরোটাই ভুলে ভরা!!?? আসলে তা নয়
মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় স্রষ্টা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে তা সৃষ্টি করেছেন প্রতিটি অণু-পরমাণুর মাঝে কিছু স্বভাব-বৈশিষ্ট দিয়ে সেগুলো তৈরী করেছেন কিন্তু এই সকল নিয়ম-কানুন বা থিউরী আল্লাহ তা'লা মানুষকে বলে দেন নি কারণ, এগুলো জানা বা বোঝা এবং এগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা করাB মানুষের জীবনের চরম কোন লক্ষ্য হতে পারে না তবে স্রষ্টার পরিচয় লাভের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু কোরআনের ছত্রে ছত্রে বলে দেয়া আছে 

বিজ্ঞান যা করে সেটা হল, মহাবিশ্বের প্রচলিত এসকল নিয়ম-কানুন  থিউরীগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিস্তর গবেষণার মাধ্যমে উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করে ফলে কখনো তারা ভুল করে, কখনো সঠিক করে কোন থিউরী ভুল প্রমাণিত হলে সেটা নিয়ে আবার বিস্তর গবেষণায় রত হয় এভাবে একের পর এক গবেষণা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোন একটা বিষয়ে তারা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে আবার কোন কোন বিষয় অমিমাংসিত গবেষণাধীনই থেকে যায় যুগযুগ ধরে তাদের এই গবেষণায় ভুল হওয়াটা অতি স্বাভাবিক করণ, তারা যে বিষয় নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত তা তো তারা নিজেরা সৃষ্টি করে নি সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তা'লা সুতরাং আরেকজনের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করলে ভুল হতেই পারে আর এই গবেষণাটা হয় যদি এক সেরা কুশলী আল্লাহ তা'লার সৃষ্টি নিয়ে তাহলে তো ভুল হওয়াটা অতি স্বভাবিক বিষয়

g‡b Kiyb, আপনি একজন আনকোর ব্যক্তি আপনাকে যদি we‡k¦i একটা অতিকায় পরমাণু চুল্লিতে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় আর বলা হয়, পরমাণু চুল্লি কিভাবে কাজ করে? কোন কোন থিউরী ফলো করে চুল্লিটাকে বিদ্যুৎ উৎপাদন মরণাস্ত্র তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হয়? আপনি নিশ্চয় প্রথমে ভুল করবেন! তারপর দীর্ঘ শ্রম গবেষণার পর হয়ত কিছু পারবেন আর কিছু হয়ত আজীবন আপনার অধরাই থেকে যাবে ওগুলোতে আপনি বারবার ভুল করবেন বারবার হোঁচট খাবেন এটা কিন্তু অতি স্বভাবিক বিষয় কারণ, আপনি এই বিষয়ে একেবারেই গণ্ডমূর্খ তদ্রূপ এই মহাবিশ্বটাও কিন্তু এক বিশাল পরমাণু চুল্লি আজও পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে চলেছে আর আমরা হলাম এই পরমাণু চুল্লিতে গণ্ডমূর্খ আনকোর ব্যক্তির মত গবেষণা করতে গিয়ে কখনো ভুল করি, কখনো সঠিক করি আর কখনো কিছুই বুঝতে পারি না

কিন্তু যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন তিনি তো আর ভুল করতে পারেন না তাঁর গ্রন্থে  যদি এই বিষয়ে কিছু  বলে দেয়া থাকে তাহল সেটাকে তো আর ভুল বলার অবকাশ নেই তিনি বলে দিয়েছেন, পৃথিবী ঘুরে! আর আমাদের গবেষণায় দেখা  গেল, পৃথিবী স্থির তাহলে কি তাঁরটা ভুল(!) নাকি আমাদের গবেষণা ভুল!! নিশ্চয় আমাদের গবেষণার ত্রুটি আরও গবেষণা করলে হয়ত সঠিকটা বের হতে পারে কিন্তু তা না করে যিনি এসবের স্রষ্টা তাঁর বাতলে দেয়া থিওরীর উপর আমাদের গবেষণার ত্রুটিকে চাপিয়ে দেয়াটা কতটা নির্বুদ্ধিতার কাজ!!!

আশ্চর্যের বিষয় হল, যুগে যুগে এই নির্বুদ্ধিতার কাজটাই করে আসছে আমাদের বিজ্ঞ(?) বিজ্ঞানীরা যখনই তাদের কোন থিওরী কোরআনের বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে তখনই তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিজ্ঞান ঠিক; কোরআন ভুল 'দিন পর যখন আরও বিস্তর গবেষণায় দেখা গেল, কোরআনই তো যথাযথ বলেছে তখন ওরা বলে, এটা কোরআন  বলেছে বলে ঠিক হয় নি বরং আমাদের গবেষণা প্রযু্ক্তির উন্নতির কারণে সঠিকটা নির্ণয় করতে পেরেছি এর উদাহরণ বিজ্ঞানের ইতিহাসে ভুড়ি ভুড়ি আছে আমরা কিছু নমুনার স্বরূপ দেখি-

এক.
খৃস্টীয় দ্বতীয় শতকে মিশরের নীলনদের তীরে একজন জ্যোতির্বিদর আগমন ঘটে যারা মাথার উপরের অসীম মহাশূন্য নিয়ে গবেষণা করেন তাদেরকে বলা হয় জ্যোতির্বিদ তিনি হলেন ক্লদিয়াস টলেমি তিনি একজন কঠোর পরশ্রমী জ্যোতির্বিদ ছিলেন তার 'আলমাজেস্ত' গ্রন্থে দাবী করেন, 'পৃথিবী ঘুরতে পারে না পৃথিবী অচল, অটল, স্থির তাই পৃথিবী বিশ্বের কেন্দ্র' টলেমির এই বিশ্বাস তার পরবর্তী জ্যোতির্বিদদের কাছে ছিল ঐশী বাণীর মত ফলে পনের শতক পর্যন্ত জ্যোতির্বিদদের ধারণা ছিল, পৃথিবী স্থির এবং মহাবিশ্বের কেন্দ্র সূর্য, চন্দ্র অন্যান্য সকল গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে
এরপর খৃস্টীয় চৌদ্দ শতকে ইউরোপে জন্ম গ্রহণ করেন এক জ্যোতির্বিদ তিনি হলেন নিকোলাস কোপারনিকাস তিনি সর্বপ্রথম টলেমির বিশ্বকাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে মত দেন, পৃথিবী স্থির নয় এবং মহাবিশ্বের কেন্দ্রও নয়।

(চলমান....) 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন