ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী : তারুণ্যের খোঁজে...

কওমী অঙ্গনের একজন বিখ্যাত লেখক তিনি বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারও বটে। তিনি ফেইসবুক ব্যবহার করেন। শুধু ব্যবহারই করেন না, সকলের পোস্টে নিয়মিত লাইক-কমেন্টও করেন। এমনকি অনেকের ইনবক্সেও রিতিমত টোকা দেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর ওয়ালে কোন পোস্ট নেই। তিনি যে এত বড় লেখক সেটা তাঁর ওয়াল এবং আইডি নাম থেকে অনুমান করার কোন জো নেই। সবার মত তাই আমিও তাঁকে চিনতে পারি নি। এ্যকসেপ্ট করার পর থেকেই তিনি ইনবক্সে নক করতে শুরু করেন। আমিও রিপ্লে দে কিন্তু অনেকটা দায়ছাড়া গোছের উত্তর দিয়ে কেটে পড়তে চাইতাম। কারণ ফেইসবুকে বড়-ছোট নির্ণীত হয় ওয়ালের পোস্ট দেখে। কিন্তু তাঁর ওয়াল ছিল তৃণহীন মরুভূমির মতই ফাঁকা। তাই অবহেলা করতাম। তবে তিনি নাছোড় বান্দা। ভাব জমানোর হেন চেষ্টা নেই যা তিনি করতেন না।  আমার মত চুনোপুটির সাথে ভাব জমানোর এই প্রাণান্ত প্রচেষ্টার কোন কারণ খুঁজে পেতাম না। আমি তো কোন সেলিব্রেটিও না, ভাল কোন লেখকও না। তারপরও এই লোকের এমন আতিপাতি দেখে যারপরনাই বিরক্ত হওয়া শুরু করলাম। তবে মাঝে মাঝে খুব ভাল লাগত। কারণ, এমন সুন্দর সুন্দর টপিক নিয়ে আলোচনার যাত্রা শুরু করতেন যে, বিরক্ত হওয়া তো দূরের কথা, একেবারে মুগ্ধ হয়ে যেতাম। তাই প্রায়শই তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করতাম। কিন্তু পরিচয়ের ব্যপারে কোন কথা উঠলেই তিনি সযত্নে তা এড়িয়ে যেতেন। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় মাস ছয়েক।

তারপর হঠাতই একদিন তিনি তাঁর পরিচয় দিয়ে বসলেন। আমি মুহূর্তের জন্য থ খেয়ে গেলাম। ভাবলাম আমার সাথে ঠাট্টা করছেন কিনা। পরে কিছু ক্লু'র মাধ্যমে নিশ্চিত হলাম যে, সত্যিই তিনি সেই বিখ্যাত ব্যক্তি কিন্তু পরিচয় পাওয়ার পর আর স্বাভাবিকভাবে উত্তরে দিতে পারছিলাম না আবার কিছুটা ভয়ও পেলাম। কারণ, পরিচয়ের অভাবে বেয়াদবি তো কম করি নি। তারপরও সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এমন লুকোচুরি করলেন কেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আসলে এই যুগের তরুণদের বুঝতে চেষ্টা করছি। তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় আদান-প্রদান করে বর্তমান প্রজন্মের মনন-মানষিকতা ও চিন্তা-চেতনার সাথে পরিচিত হচ্ছি তাই, কারো কাছেই আমার পরিচয় দিচ্ছি না। পরিচয় দিলে সবাই স্বাভাবিকভাবে তাদের চিন্তা-চেতনাগুলো শেয়ার করে না। ইতস্ততা অনুভবকরে। তাই এই লুকোচুরি।

সেদিনই তিনি বিদায় নিলেন। ঐ আইডিতে তাঁকে আর কোনদিন পাই নি। নক করেও সাড়া মেলে নি। তবে যাওয়ার আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন, আমি আসলে তোমাকে দিল থেকে মুহাব্বত করি। কারণ তুমি মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ সাহেবের ছাত্র। মেসবাহ সাহেবকে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি এবং অন্তর থেকে মুহাব্বত করি। তাই মেসবাহ সাহেবের ছাত্ররাও আমার কাছে ভালোবাসার পাত্র। এই জন্যই তোমাকে এত জ্বালাতন করেছি। সময়ে অসময়ে তোমাকে বিরক্ত করেছি। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।


মানুষ আমাকে ভালবাসবে, মুহাব্বত করবে এমন কোন গুণ নেই, নেই কোন যোগ্যতাও; শুধু মেসবাহ সাহেবের ছাত্র হওয়ায় কেউ আমাকে মুহাব্বত করে বিষয়টা সত্যিই আন্দের। পারফিউম কিনতে না পারলেও পারফিউমের শোরুমে বসে থাকলে যেমন গাত্র পারফিউমের সুগন্ধে মোহিত হয়, তেমনি বড়দের কাছ থেকে কিছু নিতে না পারলেও বড়দের আশেপাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও লাভ থেকে খালি নয়। পার্থিব উপকার না পেলেও, অপার্থিব তো বটেই।

1 টি মন্তব্য:

يحي يوسف বলেছেন...

জাযাকাল্লাহ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন